রবিবার ১২ মে ২০২৪
Online Edition

বন্ধ পোস্তগোলা ব্রিজ চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

নাছির উদ্দিন শোয়েব: সংস্কারের কারণে বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুতে (পোস্তগোলা ব্রিজ) সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রেখেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। বিকল্প পথ হিসেবে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু (বাবুবাজার ব্রিজ) ব্যবহার করছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা যানবাহনগুলো। এতে বাবুবাজার ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত কেরানীগঞ্জের কদমতলী থেকে নাজিরেরবাগ এলাকা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে যান চলাচল। বাবুবাজার ব্রিজের ওপরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে যানবাহনকে। অনেকেই পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন। দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যান চলাচলের একমাত্র পথ এখন বাবুবাজার ব্রিজ। এসব রাস্তায় ২১ জেলাগামী গাড়ি চলাচলের ফলে যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।

এদিকে পোস্তগোলা সেতুতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল পাঁচদিন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এ সেতুটি বন্ধ থাকায় বাবুবাজার সেতু এলাকায় তীব্র যানজট হওয়ায় বিকল্প রুটের কথাও জানিয়েছে ট্রাফিক। রোববার ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে রাতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডিএমপি মিডিয়া বিভাগ থেকে পাঠানো জানানো হয়, বুড়িগঙ্গা সেতু-১ (পোস্তগোলা সেতু) মেরামতের জন্য আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং ১, ৪ ও ৮ মার্চ এই চারদিন সেতু দিয়ে কোনো যানবাহন পারাপার হতে পারবে না।

এদিকে ধোলাই খালের এই সড়ক দিয়েই যানবাহনগুলো উঠছে বাবুবাজার ব্রিজে। ২১টি জেলার যানবাহনের চাপে বাবুবাজার ব্রিজও যানজট দেখা দিয়েছে। সেইসাথে খোঁড়াখুড়িতে অচল রাস্তায় বাস চালানো কঠিন হয়ে উঠছে বলছেন চালকরা। সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় ব্রিজে হাজারো মানুষের স্রোত। শিশু সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটেই ঢাকায় ঢুকছেন। বলছেন, তিন-চারবার ভেঙে ভেঙে আসতে হচ্ছে।  উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় পোস্তগোলা ব্রিজ। প্রায় তিন বছর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেছে যানবাহন। যাত্রীরা বলছেন, ভোগান্তি হলেও মেনে নেয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই। শ্রমিকরা বলছেন, যানবাহন চলাচল করতে দিলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা আরও কঠিন হবে।

জানা যায়, বাবুবাজার সেতুর যানজটের প্রভার পড়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের রাজেন্দ্রপুরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পর্যন্ত। সেতুর ওপর কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী কয়েক শ যানবাহন স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ যানজট প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে অপেক্ষার পর হাজার হাজার নারী-পুরুষ গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। পদ্মার ওপার ফরিদপুর থেকে আসা মোশাররফ হোসেন নামে এক বাসযাত্রী বলেন, আমার নানি অসুস্থ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাকে দেখতে মাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছি। কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর থেকে দীর্ঘ যানজটের কারণে কদমতলীর লায়ন মার্কেট পর্যন্ত আসতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। এরপরও থেমে থেমে বাস চলছে। এতে মা নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। 

আবুল কালাম নামের এক সবজি ব্যবসায়ী জানান, রাজধানীর কারওয়ানবাজার ও শ্যামবাজার থেকে সবজি কিনে কেরানীগঞ্জের বাজারগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিদিন সকালে। তবে আজ জ্যামের কারণে সবজি নিয়ে ব্রিজে দীর্ঘ যানজটে বসে আছি। কখন বাজারে যাব আর কখনই বা এ সবজি বিক্রি করব। সময় মতো না যেতে পারলে সবজিগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া বিক্রির করতে পারলেও দাম কম পাওয়া যাবে। এতে করে আমাদের যে কয় টাকা পুঁজি রয়েছে তা এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আমাদের পথে নামতে হবে। সামনে ঈদ কিভাবে বউ-বাচ্চাদের নিয়ে ঈদ করব ভেবে পাচ্ছি না। কতদিন চলবে এ ব্রিজের কাজ। তাঁতিবাজার মোড় এলাকায় বাসের অপেক্ষায় থাকা কলেজছাত্র তাসলিম জানান, ঢাকামুখী ও ঢাকা ছাড়ার উভয় রাস্তায়ই জ্যাম লেগে আছে। তবে ঢাকামুখী গাড়ির চাপই বেশি। এতে বাবুবাজার ব্রিজে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মিলছে না পর্যাপ্ত গাড়িও। যেগুলো চলছে, সেগুলো যাত্রী ভরা। ফলে বিলম্ব হচ্ছে যাত্রা। ট্রাক চালক আব্দুর রহিম বলেন, পোস্তগোলা সেতুতে সংস্কার কাজ চলছে, সকাল ৮টায় ঢাকায় যাওয়ার জন্য কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া সড়কে আসি। এখন বাজে বেলা ১২টা, কদমতলীতেই বসে আছি। জানি না কখন পৌঁছাব। মো. মকবুল হোসেন নামে একজন পথচারী জানান, মাওয়া থেকে চুনকুটিয়া আসতে যত সময় লেগেছে, তার চেয়ে বেশি লাগছে চুনকুটিয়া থেকে কদমতলী আসতে। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই ব্রিজ পার হচ্ছি। 

যানজট কমাতে বিকল্প সড়ক : ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ জানায়, বুড়িগঙ্গা সেতু-১ (পোস্তগোলা সেতু) মেরামতের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং ১, ৪ ও ৮ মার্চ এই চারদিন সেতু দিয়ে কোনো যানবাহন পারাপার হতে পারবে না। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকল্প রাস্তা হিসেবে বাবুবাজার সেতু ব্যবহার করায় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। এ অবস্থায় আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং ১, ৪ এবং ৮ মার্চ এই চারদিন বিকল্প হিসেবে অন্য সড়ক ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করেছে ডিএমপি।

বিকল্প সড়ক: (ক) পদ্মা সেতু থেকে সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামমুখী হালকা যানবাহনগুলো (বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা ইত্যাদি) শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ-মুক্তারপুর সেতু- তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর সড়ক একইভাবে বিপরীতে। (খ) পদ্মা সেতু থেকে ঢাকাগামী হালকা যানবাহনগুলো (বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা ইত্যাদি) শ্রীনগর-দোহার-নবাবগঞ্জ- কেরানীগঞ্জ-রোহিতপুর, আব্দুল্লাহপুর-কোনাখোলা মোড়-বছিলা সেতু- মোহাম্মদপুর সড়ক এবং একইভাবে বিপরীতে। (গ) গাবতলী থেকে দক্ষিণ অঞ্চলগামী যানবাহনগুলো পাটুরিয়া দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। (ঘ) এছাড়া দেশের পূর্বাঞ্চল/দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চল/দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহনগুলো চাদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাট ব্যবহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ