রবিবার ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

ববিভক্ত বিশ্বে এখন যা করণীয়

বহুদিন ধরেই আমাদের পৃথিবীটা ঠিকভাবে চলছে না। নানা কারণেই বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা এবং সভ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন। ভূ-রাজনীতি নিয়ে, অর্থব্যবস্থা নিয়ে, জলবায়ু সংকট নিয়ে কথা হয়, সম্মেলন হয়, সিদ্ধান্ত হয় কিন্তু কাজের কাজ তেমন হয় না। ফলে সংকটের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বিষয়টি উঠে এসেছে জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যেও। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস  বলেন, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায় বিশ্ব ক্রমে অস্থির হয়ে উঠছে। ফলে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক ব্যবস্থা এমন এক সময়ে ‘পশ্চাৎপদ অবস্থান’ নিয়েছে; যখন শক্তিশালী, আধুনিক ও বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন পূর্বের চাইতে অধিক। গুতেরেস বলেন, প্রয়োজন পূর্বের চাইতে অধিক। গুতেরেস বলেন, ‘যদি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বকে তার মতো করে প্রতিনিধিত্ব না করে, তাহলে আমরা কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধান করতে সমর্থ হই না, বরং সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে, প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যার অংশ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।’ জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি; উত্তর ও দক্ষিণ এবং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বিভক্তি গভীরতর হচ্ছে। গুতেরেস বলেন, অর্থনৈতিক ও আর্থিক ব্যবস্থা আর বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি বিভক্তির দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব। এছাড়া প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিভক্ত কৌশল, একক ও উন্মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে হুমকিতে ফেলেছে এবং নিরাপত্তা কাঠামোয় সম্ভাব্য সাংঘর্ষিক পরিস্থতি তৈরি করেছে।

উপলব্ধি করা যায়, বিরাজমান সমস্যাগুলোর সমাধান না হলেও পৃথিবীতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সংকট। আর উদ্বেগজনক বিষয়ও হলো বিভক্তি ও সম্ভাব্য সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি। এমন প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘অকার্যকর, সেকেলে ও অন্যায্য আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামোর’ বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে সবেচেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বার্ষিক ৫০ হাজার কোটি ডলারের উদ্ধার প্যাকেজ গ্রহণ। এছাড়া জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গুতেরেস একটি জলবায়ু সংহতি চুক্তির দাবি জানিয়েছেন। এই চুক্তির অধীন কার্বন নির্গমন করাতে সবেচেয় বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলো অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এ কাজে ধনী দেশগুলো বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেবে। তিনি আরও বলেন, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের বৈশ্বিক সক্ষমতার ৬০ শতাংশই রয়েছে আফ্রিকায়। অথচ সেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ মাত্র ২ শতাংশ।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে মহাসচিব যে বক্তব্য পেশ করেছেন, তাতে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার সংকটগুলো এসেছে। বর্তমান বিশ্বে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভক্তি গভীরতর হচ্ছে। এছাড়া নিরাপত্তা কাঠামোয় সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় ‘অকার্যকর, সেকেলে ও অন্যায্য আন্তর্জতিক কাঠামোয়’ বড় ধরনের সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। আরও বহু ক্ষেত্রেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন, প্রয়োজন সংস্কারের। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার যারা শাসক, তারাও বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে রয়েছে দুর্বলতা। এখানে যে মানবিক ও নৈতিক চেতনা প্রয়োজন, তা প্রদর্শনে বিশ্বনেতারা সক্ষম হবেন কী?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ