রবিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

কবিতা

কবিতার ঘ্রাণ 

জামসেদ ওয়াজেদ 

(কবি সায়ীদ আবুবকরকে নিবেদিত) 

 

প্রতিটি কবির থাকে ভাবনার নিজস্ব শহর 

কবি লেখে সমকাল আর লেখে প্রিয় ‘নবিনামা’ 

গোপন হৃদয় চোখে তুলে আনে নীল সামিয়ানা 

কবির মননপটে চাষ হয় রাষ্ট্র, বাড়ি, ঘর 

 

একাকী সকালগুলো কবিকে ভাবিয়ে তোলে রোজ 

ছায়ারাত্রি আলো খেলা উজানের স্রোতের ভেতর 

একটি আনন্দ ক্ষণে আমাদের ঈদুল ফেতর 

নক্ষত্র জ্বলছে বলে অন্ধকার হয়েছে নিঁখোজ । 

 

একটি আলোক দিন সূর্যরাঙা সাহসী সকাল 

আসবে হাসবে বলে প্রতিক্ষায় রয়েছে যে জাতি 

রাষ্ট্রের অসুখ দিনে অন্ধকার নিয়ে মাতামাতি 

ভাবনায় থাকে কবি ঘুমহীন আহত বিকাল। 

 

বদ্বীপ সবুজ বলে কবি খোঁজে কবিতার ঘ্রাণ 

কেবলি তাহার জন্য নিবেদিত লক্ষ অন্তপ্রাণ। 

 

সুখতারা

শাহানাজ শিউলী

 

এক মায়াবী প্রহরে বেঁচে উঠি সহস্রবার

ভুল করে কড়া নেড়েছিলাম পরিত্যক্ত দরজায়

ভেবেছিলাম তন্দ্রার অগোচরে ভাদুরে 

সোনা রোদ্দুরে নিজেকে রাঙিয়ে তুলবো।

নবান্নের গন্ধে হব মাতোয়ারা।

 

কিন্তু বুকের জমিনের একটু একটু করে যতœ করা

ফসল পুড়ে গেছে খরতপ্ত অগ্নিবাণে।

ঝলসে গেছে স্বপ্নতুর চোখ।

উদাসী হাওয়ায় আটকে গেছে জীবনের স্পন্দন।

বুকের ভিতর মৃত্যু হয় শত নক্ষত্রের।

আপন অস্তিত্বে ঘুরপাক খেতে থাকি ঝলসিত সূর্যের কক্ষপথে।

দুঃখের কক্ষপথে হাতছানি দেয় শুকতারা।

 

অমীমাংসিত অধঃপতন

আবির হাসান

 

একদিন চলে যেতে যেতে মনে হয়

পৃথিবীর সমস্ত ধুলোমাখা পথ আর

তামাম মমত্ববোধের উজ্জ্বল পিছুটান 

ভুলে গিয়ে নবাগত সময়ের সুবাস গায়ে মাখি,

যাতে মৃত্যু ব্যতিত জীবনের অবশিষ্ট 

বেদনার উপশম হতে পারি মায়ের অর্ধভাঙা 

সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে।

তবুও অতীতের সমস্ত স্মৃতিজুড়ে হোঁচটের

ভয়ংকর দৃশ্যগুলো আমার বড্ড মনে পড়ে!

অসহ কান্নায় আটকে আসা জীবনের ধূসর 

পথচলাগুলো নির্মম অধঃপতনের পথে চলে

যায় এবং ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায় চেতনার

জীবন্ত দীর্ঘশ্বাস।

যেখানে খন্ড খন্ড হয়ে পড়ে ছিলো ভবিষ্যত

উজ্জ্বলতার স্বাপ্নিক অস্তিত্বগুলো!

 

পক্ষপাত 

হাফিজুর রহমান 

 

কাউকে কখনও ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে

জিতে যাওয়ার জয়োল্লাসিত কোন পরিবার, 

তোমাকে সম্মানিত করেনি হে অভিভাবক;

বরং ঠেলে দিয়েছে নোংরা নর্দমায় -

পচনের একেবারেই -চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে;

হিমাগারের সাধ্য নেই তা প্রতিরোধ করার।

 

হারতে পারে না, হারেনি-হারে না কখনও 

ধোকা খেয়ে বোকা হওয়া নির্বোধ মানুষটা!

জিতেছে বরং কৃতকর্মের শাস্তি দিতে পেরে;

পাকাপোক্ত ব্যবস্থা, ওই নর্দমায় পাঠানোর।

লোভী-স্বার্থপর কোন অবিভাবকের পরিবার, 

যোগ্য উত্তরসূরি হওয়ার নিয়েছে প্রশিক্ষণ।

 

অনাচার দেখলেই 

হাসান নাজমুল 

 

অনাচার দেখলেই 

কেটলির গরম পানির মতো রক্ত টগবগ করে

কোমল পরানে ওঠে দহনের ঢেউ

বিদ্যুৎ-দেহের অনুভব করি অবিরাম 

নিমিষেই হারাই শান্তির খেই

 

অনাচার দেখলেই 

স্কন্ধে চড়ে নাচে মৃত্যু 

শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেগে ওঠে রাগচিহ্ন

মন বীর হয় কেবলি অস্থির হয়

তির নিয়ে ঘুরি হাতে রাত-বিরেতেই

 

অনাচার দেখলেই 

সাহস-সমুদ্রে দেই ঝাঁপ

'ঝড় ঝড় পরিবেশ’ অনুভব করি আমি

ডুবে থাকি ‘মেঘ মেঘ’ আবেগের মাঝে 

দ্রোহ করি একা, কেউ  নেই 

 

অনাচার দেখলেই 

চিরে চিরে খাই ভয়

শোধের ক্ষুধায় হঠাৎ আসক্ত হই আমি 

যুদ্ধঘোড়া হয়ে ছুটে চলি রণ-মাঠে

জীবনের মানে পাই খুঁজে বৈরী বাতাসেই।

 

অভিপ্রায়

নকুল শর্ম্মা

 

ঝড়ে বিধ্বস্ত আহত পাখি

ডানায় রাজ্যের জড়তা;

এতটুকু শক্তি নেই উড়বার

চোখের পাতায় অনন্তকালের ঘুম। 

সামর্থ্যগুলো অসামর্থ্যের দলে ধুঁকে মরছে 

নীরব ফল্গুধারায় শোণিত স্রোতধারা।

 

মৃত্যুকে জয় করার ক্ষমতা আমার নেই

অমৃত সুধা মানবের তরে নয়,

মৃত্যুর স্বাদ নিতেই আমার জন্ম, 

শত তপস্যায় এর দ্ব্যর্থক আশা

নিষ্ফলা ভূমির ব্যর্থ আকুতি মাত্র। 

তোমাকে পাওয়ার সাধ অনন্তকালের 

এ জন্মে শুধু হাতটা ধরতে দাও

তোমার সঞ্জিবনী স্পর্শে হোক 

আমার চিরবিদায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ