শুক্রবার ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

সাহিত্য সাময়িকী ‘তালপাতা’

মো: মকসেদ আলী

সম্পাদক জাকির শায়েরী কর্তৃক প্রকাশিত সাহিত্য সাময়িকী ‘তালপাতা’ ১০ম বর্ষপূর্তি সংখ্যা আগস্ট ২০২৩ পড়লাম। প্রচ্ছদ, শব্দ বিন্যাস এবং লেখার মান খুব ভালো লাগলো। পত্রিকাটিতে কবিতা ও ছড়া ৫৪টি, গল্প ১টি, প্রবন্ধ ১টি, অনুগল্প ২টিসহ লাইফ স্টাইল ও আঁকাআঁকি রয়েছে। সম্পাদকীয়, কুরআন ও হাদীসের পাতাও রয়েছে। ‘সম্পাদকীয়’ খুব কম শব্দে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

হাতে পাওয়া অনেক কবিতা ও ছড়ার মধ্যে বাছাই করে ৫৪টি ছড়া ও কবিতা সম্পাদক উপস্থাপন করেছেন। প্রথমেই স্বনামধন্য কবি জাকির আবু জাফর এর ‘একটু যদি’ কবিতাটি স্থান পেয়েছে। ‘একটু যদি হাসতে পারো/হাসতে পারো/ নিজেকে ভালোবাসতে পারো’। সুন্দর শব্দমালা, চমৎকার অভিব্যক্তি কবি ফুটিয়ে তুলেছেন। যার মন ভালো থাকে, যিনি হাজারো দুঃখ, কষ্ট, বিষাদ-বেদনা থাকার পরও হাসতে পারেন, তিনিই সুখি। তিনি শুধু নিজেকে নয়, ভালোবাসতে পারেন সমগ্র পরিবার, সমাজ ও জাতিকে।

কবি রেদওয়ানুল হক এর ‘হারিয়ে গেলাম’ কবিতাটি পাঠে মুগ্ধ হলাম। অল্প কথায় তিনি হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপক অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। নশ্বর এ দুনিয়া থেকে একদিন আমরা সবাই অচিনপুরে হারিয়ে যাবো। যেখান থেকে কোনদিন ফিরে আসা সম্ভব হবে না।

 ‘নিজেকে দেখি মরা’ কবিতায় কবি ফরিদ সাইদ একজন মৃত মানুষের উপলব্ধি থেকে জীবন বন্দনা উপস্থাপন করেছেন। মানুষের মৃত্যুর কোন সময় থাকে না। কবি এখানে সাচ্চা ঈমানের কথা বলেছেন এবং শেষ বিচারের দিনে প্রভুর আপন হতে চেয়েছেন-এ অনুভূতি সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সকল মানুষের হওয়া আবশ্যক।

‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রবন্ধটি লিখেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকার প্রিন্স আশরাফ। এটি একটি যুগোপযোগী প্রবন্ধ। প্রতি অনুষ্ঠানেই যেমন খুশি তেমন সাজো ইভেন্টটি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে। প্রবন্ধকার এ প্রবন্ধে আর্মি অফিসারের ছেলে টুটুলের আর্মির সাজে সজ্জিত হওয়ার থেকে সুপালিশওয়ালা তুহিন গরিবের সন্তান হওয়ার পরও ২য় পুরস্কার প্রাপ্তি সঠিকভাবে তুলে ধরেছেন। অপরদিকে একজন আর্মি অফিসার তার ছেলের বন্ধু তুহিনের পরিবারকে স্বাবলম্বী করেছেন যা বর্তমান সমাজে বিরল দৃষ্টান্ত।

‘বর্ষার ছবি আঁকা বালিকার চুল’ কবিতায় কবি মানিক চক্রবর্তী বর্ষার প্রকৃত রূপ সুনিপুণ তুলিতে এঁকেছেন। বর্ষায় একজন কিশোরীর মানবিক কল্পনা এবং একজন বালিকার চুলের যে সৌন্দর্য তা উপস্থাপন করা হয়েছে। 

সম্পাদক জাকির শায়েরী ‘একজন মানবিক ডাক্তার ও কবি আমজাদুল হক’ প্রবন্ধে একজন প্রকৃত সেবা প্রদানকারীর কার্যক্রম সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। ডাক্তার এবং সাহিত্যিক দুই মেরুর বাসিন্দা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সাহিত্য অঙ্গনে বিচরণ সত্যি আশাব্যঞ্জক। একজন চিকিৎসকের মধ্যে যত গুণের প্রয়োজন সব গুণই তার মধ্যে বিরাজমান। স্যালুট জানাই এ মহান ব্যক্তিকে।

লেখক সুলেখা আক্তার শান্তা’র ‘বিপর্যস্ত স্বপ্ন’ গল্পটি একশতে একশ পাওয়ার দাবীদার। বর্তমান সমাজের বাস্তব রূপ তিনি গল্পটিতে অলংকরণ করেছেন। একটি মোটরসাইকেল কিভাবে রহিমার স্বপ্ন আর আশা ধ্বংস করতে পারে, কিভাবে একটি পরিবার ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করতে পারে; কিভাবে রহিমা হার্ট এ্যাটাকে মারা যেতে পারে তা সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। অপরদিকে একজন মহিলা কত শকুনের হায়েনা হতে পারে তার ছবিও অঙ্কন করা হয়েছে। অপয়ার অপবাদ যেন আর কারো উপর পতিত না হয়-সে বিষয়ে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তবেই হবে সমাজ, জাতি ও দেশ উন্নত।

সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, তালপাতা একটি পাঠকপ্রিয় পত্রিকা। তবে এতে কিছু বানান অশুদ্ধ ও যতি চিহ্ন ব্যবহারে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। যা পরবর্তী সংখ্যায় সম্পাদক সতর্কতা অবলম্বন করবেন মর্মে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করছি। 

১০ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘তালপাতা’ পরিবার, লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও পাঠকগণকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এগিয়ে যাক তালপাতা। কামনা করছি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সাফল্যের।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ