লাল বাক্স

আহমাদ সাঈদ
হাইওয়ে রাস্তা পেরিয়ে রেললাইন। রেললাইনের শেষ প্রান্ত ঝাপসাটে। ওদিকে তাকালে, দৃষ্টি সীমান্তে অস্পষ্টতা ভাসে। চোখে অন্ধকার নেমে আসে। এই রেলপথ আর কতদূর খুব বেশি দূর, হয়তোবা। এরি পাশে সুন্দর এক গ্রাম। যে গ্রামের নাম রঘুনাথপুর।
আমাদের বেড়ে ওঠা, এই সুন্দর গ্রামে। যেখানে কেটেছে সুন্দর আর রঙিন রঙিন দিন। আমাদের বাড়ির অদূরেই ইউনিয়ন পরিষদ, শিবপুর ইউনিয়ন। আমি আর মিতু আপা প্রায়ই সেখানে যেতাম। সেখানে যেতে হয়! মাঠ পেরিয়ে, জঙল পেরিয়ে, সাঁকো পেরিয়ে, সবুজ ঘাস আর বন-বনানী পেরিয়ে। ইউনিয়ন পরিষদের দেয়ালে লেগে থাকতো সমূহ শেওলা'রা। সবুজ সবুজ শেওলাদের দেখলে মনে হতো, দেয়ালের পিঠে এ যেন এক! ঘন ঘাস বন। ওখানেই একটা ভাঙা ঘর ছিল। ঘরের সামনেই একটি বাক্স ঝুলে থাকতো। লাল বাক্স। এটি তালা মারা থাকতো। বাক্সের মধ্যিখানে ঠিক লেখা থাকতোথথথথ খোলার সময় তিন টা। চাবি থাকতো সম্ভবত! বুড়ো আজিজ মিয়ার কাছে। আমরা তিন টা বাজার অপেক্ষায়, সময় গুনতাম। ঘড়ির কাটা তিন'টা কাছাকাছি হলে, আমরা সেখানে গিয়ে হাজির হতাম। দেখতাম বাক্স থেকে! সবুজ, হলুদ, আরো নানান রঙ বেরঙয়ের! খাম বের করতেন; বৃদ্ধ আজিজ মিয়া । সেগুলোর ভিতরে কী থাকতো আমরা কখনো ভাবতাম টাকা- পয়সা হয়তোবা। অনেক লোকজন জড়ো হতো তখন। কেউ খালি হাতে আসতো, কেউবা সাথে করে খাম নিয়ে আসতো। তারা খামটি লাল বাক্সে ফেলে দিতো। সেই খামে কী টাকা থাকতো, নাকি কালো হরফে লেখা সাদা সাদা কাগজ। কী জানি। একটু পর'ই আজিজ মিয়া সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন, টুংটাং শব্দ বাজিয়ে বাজিয়ে। তার হাতে একটা হারিকেন আর থলে থাকতো। সেই থলেতে কতগুলো খাম থাকতো। সাইকেলের সাথে বাঁধা থাকতো, লম্বা লাঠির মতো কী যেন একটা জিনিস; যেটা সামনে দিয়ে ত্রী'ভোজের মতো বাঁকা। বাক্সটির রঙ আর লাল নেই এখন ; বদলে গেছে সেই রঙ, জঙ ধরতে ধরতে। সেই! ছোট্ট বেলা , আমাদের মনে একটা কৌতূহল লেগে থাকতো! ওই লাল বাক্সের প্রতি। তখনো এটা বুঝার বয়স আমাদের হয়ে ওঠেনি, এটা যে! ডাকবাক্স। এতক্ষণ বলছিলাম নব্বই দশকের কথা। এখন দু হাজার তেইশ সাল। ঐতো সেদিন গিয়েছিলাম ইউনিয়ন পরিষদে, সেই ছোট বেলার স্মৃতিচারণ করতে। এখন আর আজিজ মিয়া কেউ চোখে পড়ে না। সেই বাক্সের সামনে লোকজনও ভিড় জমায় না আর । কোথায় হারিয়ে গেল সেসব সুন্দর সুন্দর দিন।